সোহেল সানি:
তামিম ইকবাল, আমাদের জাতীয় সম্পদ ও অস্তিত্বের অনুভূতি। এ স্বীকারোক্তি লইয়া বিরোধবিবাদের কোনপ্রকার বালাই থাকিতে পারে না। তামিম আর আমাদের কী দিবেন, তাহা ভবিষ্যতের উপরই ছাড়িয়া দেওয়া হোক কিন্তু তিনি এ যাবৎ যাহাকিছু দিয়া ফেলেছেন, তাহা বাঙালির মনুষ্যভান্ডারে বহুবহু রেকর্ড হইয়া বর্তমান-ভবিষ্যত ক্রিকেটারদের মাঝে, অনুপ্রেরণা যোগাইতেছে এবং অনন্তকাল ধরিয়াই যোগাইয়া চলিবে। মনমেজাজে ছড়াইবে স্ফূরণ।
রাজনৈতিক দলমতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়া বলিবার চাই, আমাদের যেসমস্ত সন্তানেরা তাহাদের মেধাগুণ আর প্রতিভার জোরে দ্যুতি ছড়াইয়া বিশ্বের পথ-প্রান্তরে লালসবুজের আলোকচ্ছটা ছড়াইয়া দিচ্ছেন, তাহারাও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যায় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম সন্তান।
রাজনীতির পণ্ডিতি বিচারবোধ দ্বারা তাহাদের কীর্তির পরিমাপ করিতে চাইলে, তাহা হইবে বাংলাদেশকেই বঞ্চিত করার শামিল। রাগঅনুরাগের বশবতী হইয়া ক্রিকেটের কোন রাজপুত্র তাঁর অপ্রতিরোধ্য যাত্রায় বিলম্বন ঘটাইতে পারেন না, তামিম ইকবাল এই বোধদয় জাগরিত করিয়া সগৌরবে আবারও ক্রিকেটের দরজায় কড়া নাড়াইয়াছেন।এটা ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে একটি সুসংবাদ।
সুস্বাগতম বিশ্ব ক্রিকেটযোদ্ধা বীর চট্রলার তামিম ইকবালকে। তামিম ইকবাল বিলম্বে হইলেও মস্তবড় একটা স্বীকারোক্তি করিয়া ফেলেছেন। তিনি বলিয়াছেন-
"শেখ হাসিনাই আমাদের নির্ভরতার ঠিকানা।" সাংবাদিকতার নিরপেক্ষতার কথিত তামাশার সঙ্গে আমার কোনপ্রকার যোগসাজশ নাই। তাই দ্বিধাহীন চিত্তে বলিবার চাই যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্মন্ধে তামিম ইকবালের সরব-সরল স্বীকারোক্তিটি হইয়া উঠুক আপাময় জনগণমনের, সর্বসাধারণের। যেমনটি হইয়াছিল, শেখ হাসিনার জন্মদাতা- আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেলাতে, সত্তুর-একাত্তরের মহাজাগরণে। আমার এই প্রসঙ্গের অবতারণা উদ্দেশ্যে নিহিত রহিয়াছে, কিছু বিষয়। সম্মুখে আমাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ লড়াই। অনুষ্ঠেয় ওই লড়াইয়ে আমাদের ক্রিকেটারদের মনমেজাজে অনুপ্রেরণার স্ফূরণ ছড়াইয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে আমাদের অনুভূতি একীভূত হইয়া শক্তিমত্তার বাহাদুরি প্রদর্শিত হইবে। এতে কোনপ্রকার সন্দেহ নাই। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর্দা নামার পরপরই বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া আমাদের বিবেকবুদ্ধি বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িবে। এই নির্বাচন লইয়া হানাহানি, রক্তপাত একটা যুদ্ধবিগ্রহের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলিয়া দিবে বাংলাদেশটাকে। জনমনে উদ্ধেগ, উৎকন্ঠার সর্বোচ্চ মাত্রা পাইবে। সেই দিক হইতে একখানা সদুত্তর হইলো, বাংলাদেশ দাঁড়াইয়া আছে, একটি জলন্ত আগ্নেয়গিরির উপর।
দেশবিদেশে থাকা বাংলাদেশী রাজনৈতিক দাজ্জালরা প্রকৃতপক্ষে একেকটা বিষাক্ত কীটপতঙ্গ। ওরা প্রবেশ অনুপ্রবেশ ঘটাইয়া বাংলাদেশের দেহে ভাইরাস ছড়াইয়া দিচ্ছে অথবা দিতে বদ্ধপরিকর। এরকমের আশঙ্কা করেন না, এমন লোক খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। নির্বাচনকে উপলক্ষ করিয়া যে ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা করিতেছি, তা মরণব্যাধি করোনা'র অপেক্ষা বহুগুণে বিষাক্ত। এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাইয়া রাখার জন্য একমাত্র উপায় হইলো, সর্বস্তরে জনসচেতনতা। করোনাকালীন বাংলাদেশটাকে বাঁচাইবার জন্য শেখ হাসিনার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় মোহিত হইয়া যেমন তাঁর উপর নির্ভরতা রাখিয়া ছিলো পুরোজাতি, তদ্রূপ তামিম ইকবালের সহিত মত মিলাইয়া জনগণের উচিত হইবে আগামী নির্বাচন প্রশ্নে নির্ভরতার ঠিকানা হিসেবে শেখ হাসিনাকেই বেছে লওয়া। তাহলেই কেবল বাংলাদেশ সকলপ্রকার রোগবালাই মুক্ত হইয়া বাঁচিবার পারিবে। এজন্য শেখ হাসিনার আগামীর নির্বাচনকে সফল করিয়া লইতে হইবে নিজ নিজ স্বার্থকে জলাঞ্জলি না দিয়া। এর ব্যাতিক্রম ঘটাইলে আমরাই আমাদের বিনাশ করিবার পথকে উন্মুক্ত করিয়া দিবো। ভাইরাস নামক বিষাক্ত কীটপতঙ্গগুলোকে দুধকলা সেবনের সুযোগ দেওয়া হইলে প্রকারান্তরে রক্তসেবন করিবার জন্য নিজেদেরকে তৈরী করিয়া দেওয়া। করোনার ফলশ্রুতিতে মৃত্যুর যে মিছিল আরশ হইতে নাজিল হইয়া ছিলো বিশ্বব্যাপী, তাহা বাংলাদেশে নাজিল হইবে মানবসৃষ্ট ভাইরাস দেহে সংক্রমিত হইলে। শেখ হাসিনার নির্বাচনী সাফল্যের উপরই নির্ভর করিতেছে, বিশ্বভূবনে শির উঁচিয়ে দাঁড়াইয়া থাকা স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা যাইবে কিনা। যদিও আমি আমার মনের গহীনে একখানা বিশ্বাসের বীজ রোপণ করিয়াছি যে নিশ্চয়ই শেখ হাসিনার সাফল্যের ফলশ্রুতিতে বাঁচিবে বাংলাদেশ। কেননা বাংলাদেশ আমাদের বীরজনতার বাংলাদেশ, ত্রিশলাখ শহীদের বাংলাদেশ, সম্ভ্রম খোয়া যাওয়া আমাদের দুই লক্ষ মা-বোনের বাংলাদেশ, সর্বোপরি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। আমি অভিনন্দন জানাইতেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, তিনি ক্রিকেটের বরপুত্র তামিম ইকবালকে ডাকিয়া পরম মাতৃস্নেহের অভিভাদন ছড়াইয়া দিয়াছেন। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সস্ত্রীক একটি ছবি ভাইরাল করাইয়া যাহারা তামিম ইকবালকে শেখ হাসিনার হইতে দূরে সরাইয়া রাখার হীন মানসিকতা প্রদর্শন করিয়াছিলো, তাহাদের মহত্তম জবাবটি সয়ং শেখ হাসিনাই দিয়া দিলেন। অতি উৎসুক আহাম্মকরা যাহা হৃদয়াঙ্গোম করিতে পারে নাই, তাহা অবলীলায় করিয়াছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। আর তাহা হইল, বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তামিমের সস্ত্রীক ছবিখানা দেশ ও দশের কোন ক্ষতিসাধন করেনাই বা করিবার সাধ্যও নাই। শেখ হাসিনার ন্যায় বেগম খালেদা জিয়া এদেশের প্রধানমন্ত্রী হইয়াছিলেন। আর তখন ক্রিকেট অঙ্গন শুধু নয়, যে কোন অঙ্গনের সাফল্যঅর্জনকারী ব্যক্তি বিশেষ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর সহিত ছবি তুলিতেই পারেন বা ক্যামেরা ক্লিক করিবে এটাই স্বাভাবিক। এমনকি বিরোধী দলের নেতা কেবল নয়, যে কোন রাজনৈতিক দলপ্রধান বা দলনেতার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া আশীর্বাদ কুড়াইতে পারিতেন, তামিম ইকবাল সেই দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করিয়া বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবেও বেগম খালেদা জিয়ার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া ক্যামেরা বন্দী হইতেই পারেন। তবে এটা ঠিক যে তামিম ইকবাল কিংবা কোন সাফল্য অর্জনকারী সুনাগরিক যদি স্বাধীনতা বিরোধী কোন দল বা গোষ্ঠীর সহিত সাক্ষাৎ করিয়া আশীর্বাদ কুড়াইয়াছেন, বিষয়টি এমন হইলে আমাদের অনুভূতিতে রক্তক্ষরণ হইবে, এটাই স্বাভাবিক। সর্বস্তরের মানুষের রাগ-বিরাগ, মতভেদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই সার্বজনীন কল্যাণে মহত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন বলিয়াই তিনি প্রধানমন্ত্রীর মসনদে সমাসীন অবিরাম।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।